শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায়
শীতে পরিবেশের আদ্রতা ও জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ায় আমাদের ত্বকের নানান ধরনের সমস্যার দেখা দেয়।তার মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যাওয়া। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যাওয়ার কারণে আমাদের নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়।
তবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যাওয়ায় ভয়ের কোন কারণ নেই। এর নানা রকম প্রতিকারও রয়েছে। শীতের দিনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফাটার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আজ বিস্তারিত জানাবো এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে।
শীতের দিনে যে কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যায়
শীতের দিনে শরীরের বিভিন্ন ত্বক ফাটার কারণে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন। ত্বক ফাটার কারণে আমাদের শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য অনেকেই আতঙ্কে থাকেন। কিন্তু যদি নিয়মিত কিছু উপায় ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এটার প্রতিকার পেতে পারেন। চলুন ,আগে জেনে নেওয়া যাক শীতের দিনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যায় কেন ।
সাধারণত শীতে পরিবেশের আর্দ্রতা ও জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায় যার কারণে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যায়।যার মধ্যে রয়েছে পা ফেটে যাওয়া, ঠোঁট ফেটে যাওয়া,মাথার ত্বকে খুশকির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, ত্বক অতিরিক্ত খসখসে হয়ে যাওয়া আরো বিভিন্ন রকমের কিছু সমস্যা। বিজ্ঞানীদের মতে, শীতে আবহাওয়া অত্যন্ত শুষ্ক থাকে।
যার অন্যতম কারণ হলো স্বল্প আর্দ্রতা, প্রখণ্ড সূর্যের আলো, অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস। আসলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরেরও নানান ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যার মধ্যে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যাওয়াই অন্যতম লক্ষণ।সচারচর শীতকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প পরিমাণে খুবই কম থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন ,মানবদেহের উপরের ত্বকের যে কোষে সেখানে পানি বিদ্যমান ,তা কোষের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যায়। যার ফলে শীতকালে ত্বক হয়ে ওঠে খসখসে,রুক্ষ, টানটান। জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে আমাদের দেহ থেকে ঘাম বের হতে পারে না।যার কারণে সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে বের হয়ে আসা তৈলাক্ত পদার্থ শরীরে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না।শরীরের শুকনো জায়গাগুলো তখন রুক্ষ হয়ে যায়।
শীতকালে পা ফেটে যাওয়ার কারণ
শীতে জলবায়ু অত্যন্ত শুষ্ক থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ফেটে যায়। যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো পা ফেটে যাওয়া। এছাড়াও নিষ্ক্রিয় ঘর্মগ্রন্থের কারণে পা ফেটে যায়। শীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণেও পা ফেটে যেতে পারে। শরীরের ভিটামিন, মিনারেল এবং জিংক এর অভাব হলে পা ফেটে যায়। অনেক সময় কিছু রোগের কারণও হতে পারে পা ফাটার অন্যতম কারণ।
যেমন- সরিয়াসিস,অ্যাথলেটস ফুট,একজিমা,থাইরয়েড,ডায়াবেটিক্স সহ নানা রোগ। তাছাড়াও যাদের গোড়ালির ত্বক একটু মোটা তাদের পা ফেটে যায়।শীতের সময় দীর্ঘক্ষন ভেজা পরিবেশে বা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকলে পা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শীতকালে পা ফেটে যাবার লক্ষণ
সাধারণত পা যখন ফেটে যাবে, তার আগে ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। আবার চুলকানোর সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়াও পায়ের ত্বক খোসার মতো উঠে গিয়ে ঝরে যেতে পারে।রক্তাক্ত হতে পারে, আবার ক্ষতের সৃষ্টিও হতে পারে।
শীতকালে পা ফেটে যাওয়ার প্রতিকার
শীতকালে পা ফাটা রোধে অবশ্যই মোজা ব্যবহার করতে হবে। কেননা অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণেই আমাদের পা ফেটে যায়। আর অতিরিক্ত ঠান্ডা রোধ করার জন্য মজার কোন বিকল্প নেই।এছাড়াও নিয়মিত গোসলের পর বা পা ভেজানোর পর শুকনো কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নিতে হবে।
গোড়ালিতে বা পায়ের ফাটা জায়গায় অবশ্যই পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন মাখতে হবে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই পায়ের ফাটা জায়গায় গ্লিসারিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি মাখতে হবে।অন্তত সপ্তাহে একদিন পায়ের খুব যত্ন নিতে হবে।
যেমন হালকা গরম পানিতে অল্প পরিমাণের লেবুর রস মিশিয়ে পা ভিজিয়ে রাখতে হবে।এতে করে পায়ের মৃতকোষ গুলি চলে যাবে।লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড মৃত কোষ ঝরতে সাহায্য করে।
শীতকালে ঠোঁট ফেটে যাওয়ার কারণ
সচরাচর আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় ঠোঁটের চামড়া অনেক পাতলা হয়ে থাকে। যার কারণে অতি সহজেই ঠোঁট শুষ্ক হয়ে পড়ে। শীতকাল পড়লেই আমরা ঠোঁট ফাটার সমস্যায় ভুগি।ঠোঁট ফেটে গেলে আমরা ঠিকমত খেতেও পারিনা।
একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন আমাদের ঠোঁটের অবস্থান নাকের ঠিক নিচে। যার জন্য নিঃশ্বাসের সাথে বের হওয়া গরম বাতাস আমাদের ঠোঁটকে আরো শুষ্ক করে দেয়।যার কারনে আমাদের শরীরের অন্য জায়গার তুলনায় ঠোঁট বেশি ফাটে।
এ ছাড়াও ঠোট ফাটার আরো কারণ হলো অতিরিক্ত সূর্যর আলোয় বেশিক্ষণ থাকা, এলার্জি, থাইরয়েডের সমস্যা এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবে ঠোঁট ফেটে যায়।এছাড়াও বারবার জিব্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর অভ্যাস ঠোঁট ফাটা বা ঠোঁট কালো হওয়ার অন্যতম কারণ।
ঠোঁট ফেটে যাওয়ার প্রতিকার
শীতকালে যেমন ঠোঁট ফেটে যায়। তেমনি ঠোঁট ফাটা রোধেও নানান রকমের প্রতিকার রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণপানি পান করতে হবে শরীর ও ঠোঁটের আদ্রতা বজায় রাখতে গেলে। ফাটা রোধে নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করবে।
বেশি বেশি শাকসবজি খেতে হবে ঠোঁটের রুক্ষতা ঠেকাতে। শাকসবজি শরীরের ভিটামিন বি এর ঘাটতি দূর করতে সহায়তা করে। ঠোট কামড়ানো এবং ঠোঁট চোষার ক্ষেত্রে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সচরাচর আমরা সবাই ঠোঁট কামড়ায় এবং ঠোঁট জিব্বা দিয়ে ভিজায় ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করতে।
যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর । ফ্যাটি এসিড ঠোটের শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে, সেজন্য চেষ্টা করবেন ফ্যাটি এসিড রয়েছে এমন ধরনের চ্যাপসটিক বা লিপবাম ব্যবহার করার। অ্যালোভেরা জেল, জোজোবা অয়েল, সিয়া বাটার, গ্লিসারিন, নারিকেল ঠোঁটকে সুন্দর ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।
শীতকালে ত্বকে চুলকানির সমস্যা
শীতকালের ত্বক অনেক শুষ্ক থাকে যার চুলকানির তৈরি হয়। শীতকালে পানি প্রচুর ঠান্ডা হওয়ায় খুবই অল্প পরিমাণে পানি খাওয়া হয়। যার কারণে ত্বকে শুষ্কতার আবির্ভাব ঘটে।বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতে একটু বেশি সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পেতে শীতকালে অনেকেই গোসল কম করে।
যার কারনে শরীরে মৃত কোষ, তেল, লোশন, মশ্চারাইজার ইত্যাদি অংশ বিশেষ শরীরে জমাট বেঁধে থাকে এবং চুলকানি সৃষ্টি হয়। কেমিক্যাল যুক্ত বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করার কারণে চুলকানির সমস্যা হতে পারে।চুলকানি বা উইন্টার ইজ হলো এক ধরনের ডার্মাটাইটিস বা ত্বকের জালা।
শীতকালে চুলকানি সমস্যার সমাধান
শীতে চুলকানির সমস্যা সমাধানে হালকা গরম পানিতে গোসল করা উচিত। কেননা এতে শরীরের নমনীয়তা এবং আদ্রতা বজায় থাকে। যার ফলে অতি সহজেই চুলকানি থেকে আরাম পাওয়া যায়। শীতকালে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে এলার্জির সমস্যা তৈরি হতে পারে। অনেক সময় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় গাল লাল লাল হয়ে চুলকানি ভাব তৈরি হয় এবং খসখসে ভাব তৈরি হয়।
এছাড়াও শীতকালীন উল বা গরম কাপড়ে চুলকানি বাড়লে সুতি জামা ব্যবহার করুন। সরাসরি মোটা কাপড় না পরে সুতি জামাড় ওপর গরম কাপড় ব্যবহার করুন। চুলকানি এড়াতে গোসলের পর ভেজা গা থাকতেই ক্রিম বা তেল লাগাতে হবে।
নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল এবং কেমিক্যাল যুক্ত মশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।শীতের দিনে অন্তত সকালে আধ ঘন্টার জন্য হলেও গায়ে রোদ লাগাবেন। রোদে থাকা ভিটামিন ডি ত্বককে ভালো রাখবে।একটুও খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করলেও চুলকানির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
যেমন- অতিরিক্ত চিনি, তৈলাক্ত খাবার, অ্যালকোহল লাল মাংস থেকে দূরে থাকতে পারলেই ভালো। সব খাবার শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে যা সমস্যার কারণ হতে পারে।
শীতকালে মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যা
সাধারণত মাথার ত্বকের মৃত কোষ গুলো যখন ঝরে পড়তে থাকে,সেই ঝরে পড়া মৃত কোষগুলোকেই খুশকি বলা হয়ে থাকে।শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কম থাকার ফলে অতিরিক্ত খুশকি সৃষ্টি হয়। খুশকি ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা।এটা নিয়ে এত চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই।
শীতকালীন সময়ে এই সমস্যার মোকাবেলা একটু বেশি করতে হয়।খুশকির কারণে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুলকানি সৃষ্টি হয়।
শীতকালে মাথার ত্বকে খুশকি সমস্যার সমাধান
খুশকি দূর করতে প্রথমত খুশকি প্রতিরোধে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। যার ফলে অতিরিক্ত খুশকি দূর হয়ে যাবে।যেসব শ্যাম্পুতে জিংক পাইরিথিওন,স্যালিসিলিক এসিড,সেলেনিয়াম সালফাইড ইত্যাদি উপাদান যুক্ত রয়েছে সেসব শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
শ্যাম্পু কিভাবে ব্যবহার করবেন সেটা অবশ্যই ডাক্তারের মতামত অনুযায়ী করতে হবে। এছাড়াও অন্তত সপ্তাহে একবার লেবুর রস মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড খুশকি দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
প্রথমে একটি বাটিতে চার চা চামচ লেবুর রস এবং চার চা চামচ আদার রস একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি আপনার মাথার ত্বকে লাগান। মিশ্রণটি এক ঘন্টা মাথায় লাগিয়ে তারপর শ্যামপুর সাহায্যে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করুন।এতে করে আপনার খুশকির সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।
আমাদের শেষ কথা
শীতের দিনে ত্বকের যত্ন নিতে এবং ত্বক ভালো রাখতে এর প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। আমরা আপনাদের মাঝে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
যদি আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ফলো করতে হবে। আমরা এই ধরনের আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকে। আপনি এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।
comment url