নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের শরীরের জন্য নিমপাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি আমাদের শরীরে ঔষধের মতো কাজ করে। আবার নিম পাতার অনেক অপকারিতাও রয়েছে,যা থেকে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। নিম পাতা সাধারণত একটি ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদ। আমরা সবাই কম বেশি নিমের সাথে পরিচিত।


নিম পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আপনাদের অবশ্যই নিমপাতার রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। চলুন,নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নিম পাতার উপকারিতা

নিমপাতা এমন একটি ঔষধি গাছ,যার ডাল থেকে শুরু করে গাছের ছাল,পাতা সবকিছুই কাজে লাগে। নিমের গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। যতই বলবো তবুও কম বলে মনে হবে। নিম পাতার রস ডায়াবেটিস রোগ নিরাময়ের সাহায্য করে।

অনেক সময় আমাদের শরীরে পক্স উঠে থাকে,এমন অবস্থায় নিমের পাতা দিয়ে জাল করা পানি গায়ে মাখলে পক্স ভালো করতে সাহায্য করে। দাঁতের ব্যথা ও দাঁতের বিভিন্ন রোগ ভালো করতে সাহায্য করে। শরীরের কোনো জায়গায় পোকামাকড় কামড় দিলে এবং কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে ক্ষত জায়গায় নিমপাতার পেস্ট মাখাবেন।

এতে করে ক্ষত জায়গা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠবে। নিমপাতা সর্দি-কাশি দূর করতে ঔষধের মত কাজ করে। নিমপাতা শরীরের রোগ ব্যাধি কমানোর পাশাপাশি রূপচর্চাতেও ভূমিকা পালন করে। নিমের পেস্ট মুখের ত্বক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে সাহায্য করে।

নিম পাতা রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে ফেসপ্যাক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। নিমপাতা চুলের যত্নেও ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

নিমপাতার অপকারিতা

নিম পাতার উপকারের পাশাপাশি নিম পাতার অপকারিতা ও রয়েছে। আমরা অনেকেই খালি পেটে নিমপাতার রস বা নিমের বড়ি খেয়ে থাকি। কিন্তু এটি অতিরিক্ত খেলে শরীরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত নিম পাতার রস তেতো স্বাদের হয়ে থাকে।

এই তেতো স্বাদের জন্য অনেকে খেতে পারে না,বমি বমি ভাব চলে আসে খাওয়ার সময়। সুতরাং,যারা বমির সম্মুখীন হয়ে থাকেন তারা নিমপাতা এড়িয়ে চলুন। গর্ভবতী মহিলাদের নিম পাতা ক্ষতি করতে পারে। এটি গর্ভপাতের অন্যতম কারণ। নিমপাতা বেশি খেলে অনেক সময় পেটব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে,তারা নিমপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বিবাহিত দম্পতি যারা বাচ্চা নিতে ইচ্ছুক তারা নিমপাতা এড়িয়ে চলুন। পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী বাচ্চাদের নিমের রস খাওয়াবেন না। এতে করে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকতে পারে।

নিম পাতার সঠিক ব্যবহার

আমরা জানি নিম হলো ঔষধি গুনসম্পন্ন একটি পাতা। নিমের পাতায় রয়েছে হাজার রোগ নিরাময় করার উপায়। আমাদের জানা উচিত,নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে। আমরা অনেকেই নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানি আবার অনেকেই জানি না। চলুন,নিম পাতার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ-

গোসলের পানিতে নিম পাতার ব্যবহার

গরমের সময় আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরে। আর ঘাম থেকে তৈরি হয় শরীরে দুর্গন্ধ। এই দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে গোসলের পানিতে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে শরীরের ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাবেন। আবার অনেক সময় শরীরে ঘামাচি এর মত নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধানে গোসলের পানিতে নিমপাতা ব্যবহার করার কোন বিকল্প নেই।

এলার্জিতে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতার ব্যবহার এ এলার্জি দূর করতে দারুন ভূমিকা রাখে। এলার্জি দূর করতে নিম পাতা যেভাবে ব্যবহার করবেন,সেই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এলার্জি দূর করতে নিমের পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে রাখতে পারেন। 

তারপর এক কাপ পানির মধ্যে হাফ চা চামচ নিম পাতার গুড়া ও এক চামচ ইসবগুলের ভুষি আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ভালোভাবে মিক্স করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। আবার দুপুরে খাবারের পর,রাতে শোয়ার আগে খেতে পারেন। এতে করে আপনার এলার্জি সমস্যা চিরতরে দূর হয়ে যাবে।

খুশকি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার

আমরা কমবেশি অনেকে চুলের খুশকি,উকুন এবং চুলকানিক সমস্যায় সম্মুখীন হয়ে থাকে। এইসব সমস্যা দূর করতে নিমপাতা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। নিম পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে। পরিমাণ মতো নিমপাতা বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে 40 মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে খুশকি,চুলকানি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।

চুলের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

চুলের যত্ন নিতে আমরা সবাই পছন্দ করে থাকি। চুলের যত্নে যদি নিমপাতা ব্যবহার করা হয়,তাহলে চুল হয়ে উঠবে আরো সুন্দর। নিমপাতা ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়। নতুন চুল গজাতে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। চুলের গোড়া মজবুত করতে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন।

ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার

আমরা সবাই আমাদের ত্বকের যত্ন নিয়ে থাকি। এই ত্বকের যত্নে আমরা যদি নিমপাতা ব্যবহার করি, তাহলে আমাদের ত্বক হয়ে উঠবে আরো সুন্দর ও সতেজ। আমরা অনেকেই মুখের ব্রণের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। 

এই ব্রণের সমস্যা দূর করতে নিমপাতা ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের মুখে,চোখের নিচে অনেক সময় কালো দাগ পড়ে। এই কালো দাগ দূর করতে নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে কালো দাগ দূর হবে।

খালি পেটে নিমপাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

নিমের পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,আন্টি-ইনক্লেমেটরি,অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল,অ্যান্টি-ভাইরাল সহ আরো নানা পুষ্টি উপাদান। এই পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরের সমস্ত রোগ নিরাময় করে একটি সুস্থ শরীর দান করতে পারে,যদি আপনি নিয়মিত নিমপাতার রস খেয়ে থাকেন। চলুন,খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেইঃ-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে শরীরের ছোট বড় রোগ বাসা বাঁধতে পারে না। এই নিম পাতার রস আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

টক্সিন দূর করে

নানা ধরনের খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন প্রবেশ করে। টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে থাকে নিমপাতা। খালি পেটে নিম পাতার রস ক্ষতিকর টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে

অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার এবং তেলে ভাজা খাবার গ্যাস্ট্রিক তৈরির অন্যতম কারণ। খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

খালি পেটে নিম পাতা খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে ত্বক হয়ে উঠে সুন্দর,কোমল, মসৃণ ও দাগহীন।

খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার অপকারিতা

খালি পেটে নিমপাতা খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে। আমাদের এই ক্ষতিকর দিকটা খেয়াল রাখা উচিত। মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন সময় খালি পেটে নিমপাতা খাওয়া উচিত না,এতে করে ব্লিডিং বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। 

গর্ভবতী মহিলাদের খালি পেটে নিম পাতা খেলে বাচ্চার মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। নিম্ন রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের খালি পেটে নিম পাতা খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম

প্রতিদিন নিম পাতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আমাদের উচিত একদিন বা দুই দিন পর পর নিম পাতা খাওয়া। পরিমাণ মত নিম পাতার রস খেতে পারেন। অনেকে আছেন যারা তাড়াতাড়ি শরীরের অসুখ ভালো করার জন্য এক গ্লাস পরিমাণ নিমের পাতার রস খেয়ে থাকেন। 

কিন্তু এটা একদমই ঠিক না। মাথায় রাখতে হবে যে,সবকিছু খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ থেকে থাকে। তাই নিমের রস নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে। অতিরিক্ত তেতো হওয়ার কারণে অনেকে খেতে পারেন না,সে ক্ষেত্রে চিনির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

চর্ম রোগ নিরাময়ে নিম পাতার ব্যবহার

আমরা অনেকেই চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি। এটি নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। চর্মরোগ ভালো হতে পারে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ও নিম পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে। চর্মরোগ ভালো করতে আমরা নিমের পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে গোসলের পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারি।
এতে করে চর্মরোগ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার,নিমের তেল ব্যবহার করতে পারি। চর্ম রোগের স্থানে এভাবে নিমের রস ও তেল ব্যবহারের ফলে চর্মরোগ সমস্যা থেকে আপনারা মুক্তি পেতে পারেন।

শরীরের চুলকানি দূরীকরণে নিম পাতার ব্যবহার

চুলকানি দূর করতে নিম পাতা ঔষধের মতো কাজ করে থাকে। নিমের পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে গোসল করলে চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া নিমের পাতা বেটে চুলকানির জায়গায় মলমের মতো ব্যবহার করতে পারে। 

এতে করেও চুলকানি দূর হবে। আমাদের শরীরে নিমের পাতার ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও নিমের পাতার গুড়ো করে তার সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে চুলকানি জায়গায় লাগালে চুলকানি ভালো হয়।

নিম ফলের উপকারিতা

নিম পাতার যেমন উপকার রয়েছে তেমনি নিম ফলেরও অনেক উপকার রয়েছে। নিম ফল আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে। আমরা অনেকেই অর্শ রোগে সম্মুখীন হয়ে থাকি। এই অর্শ রোগ নিরাময়ে নিম ফলের অনেক ভূমিকা রয়েছে। 

এই ফলটি কাঁচা ও পাকা দুই রকমই খেতে পারেন। কাঁচা ফল একটু তিক্ত স্বাদের হয়,সেজন্য নিম ফল পাকলে খেতে পারেন। কেননা পাকা নিম ফল মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে।

নিম পাতার বড়ি খেলে কি হয়

নিম পাতার বড়ি হলো রোগ নিরাময়ের আরো একটি ঔষধ। সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিনটি নিমের বড়ি খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। বদহজম রোধ করতে সাহায্য করে। অনেকেই নিমের পাতার রস খেতে পারেন না,তারা নিমের রস না খেয়ে নিমের বড়ি খেতে পারেন। চলুন,এক নজরে দেখে নেয়া যাক কিভাবে নিমের বড়ি তৈরি করবেন।

নিমের বড়ি তৈরির নিয়ম

প্রথমে নিমের পাতা পরিমান মত নিতে হবে। তারপর,ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর পাতাগুলো ব্লেন্ডার বা পাটার সাহায্যে বেটে নিতে হবে। তারপর হাত দিয়ে ছোট করে বা আপনার মনের মত করে বড়ি তৈরি করে নিতে পারেন। তারপর ২৪ ঘণ্টার মতো তীব্র রোদে শুকিয়ে নিন। ব্যাস,এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে নিমের বড়ি। এটি কৌটার মধ্য বা বদ্ধ কোন পাত্রে একমাস পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

নিমপাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। আমরা আপনাদের মাঝে নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

যদি আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ফলো করতে হবে। আমরা এই ধরনের আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকে। আপনি এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।

comment url