৫টি ঔষধি গাছের নাম ও উপকারিতা

আমরা অসুস্থ হবার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য যায়। আমরা মনে করে থাকি ডাক্তার ছাড়া হয়তো অসুস্থ শরীর ভালোই হবে না। আমরা ডাক্তার ছাড়াও প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে আমাদের অসুস্থ শরীরকে সুস্থ করে তুলতে পারি। প্রাথমিক চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ভেষজ ঔষধি গাছ।

আমাদের চারপাশে নানান ধরনের ঔষধি গাছ রয়েছে। এসব ঔষধি গাছের গুনাগুন অকল্পনীয়। প্রাচীনকালে মানুষ ডাক্তারের পরিবর্তে নানান ধরনের ঔষধি গাছের রস খেয়ে তাদের রোগ নিরাময় করতো। কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে সেসব গাছ আজ প্রায় বিলুপ্ত। চলুন দেখে নেয়া যাক,কোন কোন ঔষধি গাছে কি কি গুনাগুন রয়েছে। আমরা প্রধান ৫টি ঔষধি গাছের নাম ও উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সম্পূর্ণ বিষয়টি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

থানকুনি পাতার দারুন সব উপকারিতা

থানকুনির পাতা ভেষজ ঔষধি গাছ হিসেবে কাজ করে। আমরা অনেকেই এইসব ঔষধি গাছের নাম এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে জানি। অনেকের আবার এসব ঔষধি গাছের সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। চলন থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেইঃ-

থানকুনি আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।

এটি আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এ সাহায্য করে।

পেটের আলসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

লিভারকে সুস্থ রাখে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে।

বদ হজম ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে।

চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,পটাশিয়াম ও আয়রন রয়েছে। থানকুনি পাতার রস নিয়মিত পান করলে উপরিউক্ত সমস্যা গুলোদূর হয়ে যাবে।

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার উপকারিতা

ঘৃতকুমারী হল একটি ঔষধি গাছ। যার গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। এতে রয়েছে ভিটামিন এ,ভিটামিন সি,ভিটামিন ই ,ফলিক এসিড এবং কোলিন সহ অল্প পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,খনিজ পদার্থ থাকে। এ সকল উপাদান শরীরের মুক্ত অনুর সাথে লড়াই করে শরীরকে ভালো রাখে। চলুন অ্যালোভেরার কিছু প্রধান গুণাবলী গুলো দেখে নেওয়া যাকঃ-

. খালি পেটে অ্যালোভেরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। আমরা অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি অ্যালোভেরার রস নিয়মিত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অ্যালোভেরাই এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ রয়েছে যার শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে এটি সাহায্যগত করতে পারে।

এটি শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সাহায্য করে।

অ্যালোভেরার রস পান করলে অ্যানিমিয়া রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অ্যালোভেরা ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে,তাই এটি ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যালোভেরা ত্বককে নরম,কোমল,মসৃণ করে তোলে আপনারা চাইলে নিয়মিত ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।

দূর্বা ঘাসের উপকারিতা

বিভিন্ন ভেষজ ঔষধি গাছের মধ্যে এটি একটি। আমরা দুর্বা ঘাস সবাই চিনি। মাঠে-ঘাটে,নদীর পারে, বাড়ির আঙিনায় সব জায়গায় পাওয়া যায়।সামান্য ঘাস বলে আমরা অনেকে এটিকে উপেক্ষা করে চলি। দূর্বা ঘাস একটি ঔষধি গাছ। যার মধ্যে অনেক গুণাগুণ রয়েছে। চলুন দূর্বা ঘাসের কিছু গুনাগুন সম্পর্কে জানা যাকঃ-

শরীরের কোন স্থানে কেটে গেলে ও আঘাত জনিত কারণে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি হলে দুর্বা ঘাস ব্যবহারে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়।

চুল পড়া রোধে সাহায্য করে।

বমি বমি ভাব দূর করে।

মেয়েদের অধিক ঋতুস্রাব সাদাস্রাব কমাতে সাহায্য করে।

এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে।

দুর্বাগ ঘাসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম রয়েছে। এছাড়াও ভিটামিন বি ক্যারোটিন আরো অনেক প্রকার উপাদান রয়েছে যা উপরিউক্ত সকল সমস্যার সমাধান করে।

পাথরকুচি পাতার গুনাগুন ও উপকারিতা

ঔষধি গাছের মধ্য পাথরকুচি গাছ অন্যতম। এই গাছ বড় করতে কোন সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। এই পাথরকুচি গাছের পাতার অনেক উপকার রয়েছে। চলুন পাথরকুচির পাতার গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাকঃ-

শরীরের কোন জায়গায় কেটে গেলে রক্ত পড়া বন্ধ করতে পাথরকুচির পাতা সাহায্য করে।

মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

আর এর ব্যথা দূর করে।

ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

জন্ডিস রোগ দূর করে।

চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।

তুলসী পাতার উপকারিতা

আমাদের আশেপাশে অনেকের বাড়িতে তুলসী গাছ রয়েছে। আর এই তুলসী গাছের গুণাবলী আমরা অনেকেই জানিনা। আবার অনেকেই তুলসী পাতা সম্পর্কে জানি। তুলসীতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ নানা উপকারী উপাদান।চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতার উপকারিতাঃ-

তুলসী রস পান করায় ক্যান্সার,লিভার,ডায়াবেটিকস রোগ ভালো করতে ভূমিকা রাখে।

মানসিক চাপ কমাতেও তুলসীর রস সাহায্য করে।

তুলসীর রস চোখের অনেক রোগের সমাধান করে।

অনেক সময় আমাদের চোখ জ্বালাপোড়া করে চুলকানির ভাব হয় তখন চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এ সময় তুলসীর রস পান করলে চোখের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

সর্দি কাশি সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতার রস অনেক ভূমিকা রাখে।

পেট ব্যথা,গ্যাস,আলসার নিরাময়ে তুলসির পাতার রস সাহায্য করে।

গলা ব্যথা কমাতে তুলসী পাতার রস সাহায্য করে।

এক কথায় তুলসীতে এত পরিমাণে ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যাতে করে সব ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর করা যায়। শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।

নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা

নিমের গাছ এমন একটি ঔষধি গাছ যার ডাল থেকে শুরু করে গাছের ছাল,পাতা সবকিছুই কাজে লাগে। নিমের গুনাগুন বলে শেষ করা যাবে না। নিম পাতার রস খাওয়ার প্রধান কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা দেখে নেওয়া যাকঃ-

নিম পাতার রস ডায়াবেটিকস রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে।

অনেক সময় আমাদের শরীরে পক্স দেখা দেয়। এই সময় নিমপাতা দিয়ে জাল করা পানি গায়ে মাখলে পক্স ভালো করতে সাহায্য করে।

এছাড়াও এলার্জির মত সমস্যা দূর করতে নিমপাতার রস সাহায্য করে।

অনেক সময় আমাদের দাঁতে ব্যথা হয়। দাঁতের ব্যথা প্রশমনে নিমপাতা কাজ করে।

এছাড়াও নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত ও মারি মজবুত হয়। সেই সাথে দাঁত ব্যথা ও দাঁতের বিভিন্ন রোগ ভালো করতে সাহায্য করে। শরীরের কোন জায়গায় পোকামাকড় কামড় দিলে এবং কেটে গেলে ক্ষত জায়গায় নিম পাতার পেস্ট মাখাবেন। এতে করে ক্ষত জায়গা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠবে।

নিম পাতার রস সর্দি কাশি দূর করতে ঔষধের মত কাজ করে। নিম পাতা শরীরের রোগ ব্যাধি কমানোর পাশাপাশি রূপচর্চাতেও ভূমিকা পালন করে। নিমের পেস্ট মুখের ত্বক পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। নিমপাতা রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে ফেসপ্যাক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।

নিমপাতা চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও নিমের পাতা চুলের গোড়া শক্ত করতে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

আমাদের শেষ কথা

আমরা আপনাদের মাঝে প্রধান পাঁচটি ঔষধি গাছের নাম ও এর উপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

যদি আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ফলো করতে হবে। আমরা এই ধরনের আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকে। আপনি এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।

comment url