নবজাতক শিশুর জন্মের পর পিতামাতার ১১টি করণীয়

সন্তান জন্মের পর প্রত্যেক বাবা-মা চাই তাদের সন্তান সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠুক। আমাদের ঘরে অতিথি আসলে আমরা অনেক খুশি অনুভব করি। আর সেই অতিথি যদি হয় নবজাতক শিশু তাহলে তো আর কথাই নেই।
নবদম্পতির ক্ষেত্রে শিশুর জন্মের পর তারা বুঝতে পারেন না,কিভাবে তাদের শিশুটির যত্ন নিতে হবে। শিশু জন্মের পর শুধু খুশিতে আত্মহারা হলেও চলবে না,সেইসাথে নিতে হবে শিশুর ঠিকমতো যত্ন। শিশু জন্মের পর পিতা-মাতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ১১ টি করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করব। শিশুর জন্মের পর পিতা-মাতার যত্ন নেয়ার কোন বিকল্প নেই। তাই দেরি না করে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন,তাহলে সঠিকভাবে আপনার শিশুর যত্ন নিতে পারবেন এবং সুস্থ রাখতে পারবেন।

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয়

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে কখনোই শিশুটিকে মোটা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখবেন না। শিশুটিকে কোলে নেওয়ার সময় পাতলা নরম কাপড় দিয়ে কোলে নিতে হবে।নবজাতক শিশু কোলে নেওয়ার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।সদ্য ভুমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে খসখসে চুমকি লেসযুক্ত কাপড় বা মোটা কাপড় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। শিশু জন্মের পর পিতা-মাতার অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুটি পরিমাণ মতো আলো বাতাস পায়।

শিশুর যত্নে করণীয়

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে শিশু জন্মের পর সকল পিতা-মাতার উচিত সঠিকভাবে শিশুর যত্ন নেওয়া। শিশুর যত্নে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টা সবার প্রথমে ভাবতে হবে। কেননা পরিষ্কার পরিছন্ন না থাকলে জীবাণু আক্রমণ করতে পারে।

সেই সাথে শিশুর নানান ধরনের অসুখ হতে পারে। শিশুকে কোলে নেওয়ার সময় বা যখন হাত দিয়ে আদর করবেন তখন অবশ্যই হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন এতে করে আপনার হাতে লাগা জীবাণু ধ্বংস হয়ে যাবে।

আপনার শিশুকে যখন দুধ পান করাবেন তখন আপনার স্তন একটি ভেজা পরিষ্কার পাতলা কাপড় দিয়ে মুছে নিবেন বা স্যাভলনযুক্ত ভেজা টিস্যু ব্যবহার করবেন। শিশুর ব্যবহৃত সকল কাপড় বা তোয়ালে স্যাভলন পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিবেন। 

সদ্য ভুমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে যে ঘরে শিশুটি রাখবেন সেই ঘর অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ঘরের মেঝে যখন পরিষ্কার করবেন তখন স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

নবজাতক শিশুর খাবার

সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে সব সময় মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় নবজাতক শিশু জন্মের পর বুকের দুধ পায় না। বুকের দুধ পেতে ২-৩দিন সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে খাওয়াতে হবে।

আবার, অনেক সময় মায়ের বুকের শাল দুধ বের হয়।এই শাল দুধ দেখতে হালকা হলদে হয়। সেই শাল দুধে পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এটি আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারেন। শিশুকে দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর দুধ দিব। এতে করে শিশুর গলা শুকিয়ে যাবার কোন ভয় থাকে না।

নবজাতক শিশুর গোসল করার নিয়ম

শিশুকে গোসল করানোর পূর্বে অবশ্যই শিশুর পুরো শরীর একদম মাথা থেকে পা অব্দি খাঁটি সরিষার তেল মেখে নিবেন। এটা ব্যবহারে শিশুর শরীরে অতিরিক্ত পানি লাগবে না। যেটা শিশুকে সর্দি কাশি হওয়া থেকে বাঁচাবে।


শিশুকে গোসল করানোর পূর্বে গোসলের পানি হালকা রোদে দিয়ে গরম করে নিবেন অথবা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাবেন। গোসলের সময় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাবান অথবা শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।।সতর্কতার সাথে গোসল করাতে হবে যেন কানের ভিতরে পানি না ঢুকে যায়।

শিশুর শরীর হাত-পা ম্যাসাজ

গোসলের পর শিশুর হাত-পা ম্যাসাজ করে দিবেন। হাতে একটু সরিষার তেল বা মসচারাইজার দিয়ে শিশুর হাত-পা ম্যাসাজ করে দিবেন।আপনার দুই হাতের বড় আঙ্গুল দিয়ে শিশুর হাতের আঙ্গুল ও পায়ের আঙ্গুল গুলো ম্যাসাজ করে দিবেন।এতে করে শিশুর গ্রোথ ভালো হবে। প্রতিদিন একবার করে ম্যাসাজ করতে পারেন।

শিশুর মুখ ও চোখের যত্ন

আমরা যেমন ঘুম থেকে উঠে মুখ চোখ ধুয়ে নিই তেমনি শিশুরা ধুয়ে বা মুছে দিতে হবে সেজন্য শিশুর চোখের যত্নে পরিষ্কার একটি পাতলা কাপড় ভিজিয়ে শিশুর মুখ ও চোখ সুন্দর করে ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে মুছে দিতে পারেন।

আবার অনেক সময় দেখা যায় মায়ের বুকের দুধ ও সাবধানতার কারণে শিশুর চোখে পড়ে যায় এটাকে সাধারণত কেতোর বলা হয়। সেটির কটন বার্ড এর সাহায্যে পরিষ্কার করতে পারেন। সেই সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।

শিশুর জিহ্বা  পরিষ্কার

আমরা যেমন ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ ব্যবহার করি দাঁত জিহ্বা পরিষ্কার রাখার জন্য।তেমনি শিশুরও মুখের ভিতর পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। কিন্তু নবজাতকের তো দাঁত নেই তাই ওর জিহবা পরিস্কার রাখার দরকার। অনেক সময় দেখা যায় শিশু দুধ খাওয়ার ফলে শিশুর জিহ্বায় সাদা স্তর পড়ে।

এতে করে শিশুর মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই শিশুর জিহ্বা পরিষ্কার রাখতে হবে। একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড় পানি দিয়ে ভিজিয়ে আপনার ডান হাতের আঙ্গুলের সাথে পেঁচিয়ে শিশুর জিহ্বা পরিষ্কার করতে পারেন।

নবজাতক শিশুর নখ কিভাবে কাটবেন

সাধারণত নবজাতক শিশুদের নখ খুবই ধারালো হয় আর এই নখ বড় হলে ওদের নখ দিয়ে ওদের ওই শরীরে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সময় মত নবজাতক শিশুর নখ কেটে দিতে হবে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে লোকগুলো কেটে দিতে হবে যাতে করে শিশু বড় ধরনের আঘাত না পায়। নখ কাটতে ব্যবহার করতে পারেন বেবি নেইল কাটার।

নবজাতক শিশুর কান কিভাবে পরিষ্কার করবেন

অনেক সময় শিশুর কানের মধ্যে ময়লা জমে থাকে। এই ময়লা পরিষ্কার করতে ব্যবহার করবেন বেবি কটন বার্ড। খেয়াল রাখবেন শিশু যখন ঘুমাবে তখনই পরিষ্কার করবেন কেননা জেগে থাকা অবস্থায় শিশুর নড়াচড়া করে বেশি। তখন পরিষ্কার করতে গেলে শিশু আঘাত পেতে পারে।

নবজাতক শিশুর নাক পরিষ্কার

নবজাতক শিশুর ঠান্ডা বা সর্দি লাগলে নাকের ভিতর ময়লা জমাট বেঁধে থাকে। সেই ময়লা জমাট বাধার কারণে শিশুর নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে।

শিশু যেন ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারে সেই জন্য কটন বার্ড দিয়ে সতর্কতার সাথে নাক পরিষ্কার করতে হবে। অবশ্যই শিশুর ঘুমানোর পর এটা করবেন।

নবজাতক শিশুকে রোদের সংস্পর্শে আনা

নবজাতক শিশুকে অবশ্যই মিষ্টি রোদের সংস্পর্শে আনতে হবে। কেননা রোদে আছে ভিটামিন ডি। যা শিশুর শরীরের জন্য অনেক উপকার। সূর্যের আলো থেকে আমরা 70% ভিটামিন ডি পেয়ে থাকি।তাই অবশ্যই আপনার শিশুকে সূর্যের সংস্পর্শে কিছু সময়ের জন্য হলেও রাখবেন।

নবজাতক শিশুর চুল কাটা সম্পর্কে কিছু তথ্য

মায়ের গর্ভ থেকে বাচ্চা যে চুল নিয়ে আসে এটা বাচ্চাকে তার মাথায় প্রটেকশন দেয়। তাই বাচ্চার মাথা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত চুল কাটার প্রয়োজন নেই। জন্ম থেকে ছয় মাস পর্যন্ত রেখে দিলে ভালো হবে তারপর চুল কাটতে পারেন।

নবজাতক শিশুর ত্বকের যত্ন

শিশুর তো অনেক সেনসিটিভ হয়ে থাকে। তবে শিশুদের ত্বকে আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনার পছন্দ অনুযায়ী লোশন ও ব্যবহার করতে পারেন।

নবজাতক শিশুর জন্য টিকা

আমাদের দেশে সরকার নির্ধারিত ইপিআই সিডিউল অনুযায়ী শিশুকে টিকা দিতে হবে। তাছাড়া অন্য কোন টিকা দিলে তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে। নবজাতক শিশু জন্মের পর প্রত্যেক পিতা-মাতার উচিত সঠিক এবং সময় মত শিশুটিকে টিকা প্রদান করা।

আমাদের শেষ কথা

নবজাতক শিশু জন্মের পর প্রত্যেক পিতা- মাতার যেসব বিষয় সম্পর্কে জানা উচিত আমরা আপনাদের মাঝে সেই সব বিষয় সম্পূর্ণভাবে আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।

comment url