চুলের যত্নে ৮টি কার্যকরী হেয়ার কেয়ার টিপস
কথায় আছে,যে রাধে সে চুলও বাধে। এখন কথা হলো যদি সুন্দর স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুলই না থাকে,তাহলে চুল বাধবেন কিভাবে। আর এই চুল বাধার জন্য চুলের যত্নের কোন বিকল্প নেই। আমাদের রূপচর্চার পাশাপাশি চুল চর্চাও অনেক প্রয়োজন। চুলের সঠিকভাবে যত্ন নিলে আপনিও পেতে পারেন সুন্দর স্বাস্থ্যজ্জল ও প্রাণবন্ত খোলা চুল।
চুলের যত্ন কিভাবে নিবেন এর সমস্ত বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনার চুলের যত্ন নিবেন । মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ বিষয়টি পড়ুন।চুলের যত্নে সঠিকভাবে চিরুনি ব্যবহার
আমরা অনেক সময় নানান কাজের চাপে চুল আঁচড়াতেই ভুলে যায়। কিন্তু এটা একদমই উচিত নয়। আমাদের উচিত চুলের পিছনেও একটু সময় দেয়া। কেননা নারীর সৌন্দর্য হচ্ছে চুল। খেয়াল রাখবেন সব সময় মোটা দাগওয়ালা ও ফাঁকা চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানো।
এতে করে চুল ছিড়বেনা এবং ভাঙবে না। আবার ভেজা চুল কখনোই আঁচড়াবেন না। কারণ চুল যখন ভেজা থাকে,তখন চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। এতে করে চুল ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তাই সব সময় হালকা শুকনো চুল আঁচড়াবেন।
চুলে তেল দেওয়ার উপকারিতা
আমাদের এখনকার জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা এমন যে, চুলে তেলই মাখতে চায় না। যার কারণে চুল দিন দিন হয়ে উঠছে রুক্ষ ও অস্বাস্থ্যকর। কিন্তু চুলের এই রুক্ষতা দূর করতে তেল ব্যাপক পরিমাণে ভূমিকা রাখে। সকল প্রাণীর যেমন বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য প্রয়োজন, তেমনি চুলের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন তেল।
কেননা চুলের খাদ্য হচ্ছে তেল। নিয়মিত তেল ব্যবহার করার কারণে চুলের সকল সমস্যা দূর হতে পারে। নিয়মিত তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ,জট লাগা বন্ধ এবং চুলের রুক্ষতা দূর হবে। সপ্তাহে অন্তত ২ বার চুলে তেল ব্যবহার করতে হবে।
অর্গানিক হেয়ার অয়েল রেসিপি এবং ব্যবহার বিধি
. ৪টি পেঁয়াজ
. ৪টি রসুন
. পরিমাণ মতো মেহেদি পাতা
. ১০ থেকে ১২ টি জবা ফুল
. ১টি বড় অ্যালোভেরার পাতা
. ৫০ গ্রাম মেথি দানা
. ৫০ গ্রাম কালোজিরা
. ১০০ গ্রাম কাঁচা আমলকি
. ১০০ গ্রাম হরতকি
. ৫-৬টি পেয়ারা পাতা
. ৩-৪টি তেজপাতা
. ৫০ মিলিগ্রাম ক্যাস্টর অয়েল
. ৫০ মিলিগ্রাম অলিভ অয়েল
. ১০০ গ্রাম নারিকেল তেল
. ১০-১২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল
এ সমস্ত উপকরণগুলো সংগ্রহ করুন। তারপর একটি কড়াই বা পাতিলে পেঁয়াজ রসুন কেটে ধুয়ে তারপর একে একে সংগ্রহ করা বাকি উপকরণ গুলি করায় বা পাতিলে ঢেলে দিন। এরপর চুলার উপর বসিয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন চুলার তাপ যেন মিডিয়াম অবস্থায় থাকে।
এরপর অনবরত নেড়েচেড়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর যখন তেলটা ফুটে উঠবে এবং সেই সাথে তেলের রংটাতে কালচে ভাব চলে আসবে। খেয়াল রাখবেন তেলের ভিতরে যে পাতাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো হালকা ভেসে থাকবে। তেলটা ফুটে ওঠার পর এক ধরনের ফেনা তৈরি হবে,তেলের ভিতর এই ফেনাটা যখনই কমে যাবে।
তখনই বুঝবেন আপনার তেল তৈরি হয়ে গেছে। এরপর চুলা বন্ধ করে দিয়ে ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা করে একটি পাত্রে বা কৌটাই ভালোভাবে ছেঁকে নিবেন। এই তেলটি পাঁচ থেকে ছয় মাস স্টোর করে রাখতে পারবেন। তেলটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করবেন। এই তেল ব্যবহার করার ফলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে সেই সাথে চুলের সকল সমস্যা দূর হবে।
চুলের যত্নে জবা ফুলের ব্যবহার
জবা ফুল আমাদের চুলকে কালো ও ঘন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও জবা ফুলে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড,যা চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চুল অনেক সময় ফেটে যায়। চুলের এই ফাটা রোধ করতেও জবা ফুল ম্যাজিক এর মত কাজ করে।
চুল সিল্কি করতেও জবা ফুল দারুন কাজ করে। জবা ফুল দিয়ে কিভাবে চুলের যত্ন নিবেন,চলুন তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।
জবা ফুলের হেয়ার প্যাক তৈরি ও ব্যবহারবিধি
প্রথমে কিছু জবা ফুল সংগ্রহ করে নিতে হবে। আপনার চুলের পরিমাণ অনুযায়ী ফুল সংগ্রহ করবেন। তারপর ভালোভাবে ব্লেন্ডারের মধ্যে জবা ফুল ও ৪চা চামচ মেথি মিশিয়ে একসাথে ব্লেন্ড করে নিবেন। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল হেয়ার প্যাক। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
এই হেয়ার প্যাক শ্যাম্পু করার পর অর্থাৎ পরিস্কার তেলবিহীন চুলে ব্যবহার করতে হবে। হেয়ার প্যাকটি চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মেখে ৪০ মিনিট রাখতে হবে। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এটি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহার করলে চুল হবে সোজা,সিল্কি ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
চুলের যত্নে আমলকি
চুলের যত্নে আমলকির কোন তুলনা হয় না। আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আমলকি চুলের গোরা শক্ত করে থাকে। সেই সাথে চুল উজ্জ্বল করে। আমলকি চুল ঘন,লম্বা ও কালো করতে সাহায্য করে। চলুন দেখে নেওয়া যাক,কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমলকির হেয়ার প্যাক তৈরি করবেন এবং কিভাবে ব্যবহার করবেন।
আমলকির হেয়ার প্যাক তৈরি এবং ব্যবহার বিধি
ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমলকির হেয়ার প্যাক কিভাবে তৈরি করবেন এবং এই হেয়ার প্যাক কিভাবে ব্যবহার করবেন সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এখানে দুইটি পদ্ধতিতে হেয়ার প্যাক তৈরির নিয়ম রয়েছে। আপনার ইচ্ছামতো যে কোনোটি ব্যবহার করতে পারেন।
১ম পদ্ধতি
প্রথমে কাঁচা আমলকি থেকে আমলকি রস বের করে নিতে হবে। তারপর ৩চা চামচ নারিকেল তেল, ৪চা চামচ অ্যালোভেরা জেল একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। তারপর চুলে পেস্টটি ২৫-৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল নরম হবে,খুশকি কমে যাবে,চুল হবে ঝলমলে। এই পেস্টটি সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
২য় পদ্ধতি
আমলকি ব্যবহার করে আরো একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারেন। একটি বাটিতে ৩চা চামচ আমলকির গুড়ো,১টি ডিমের সাদা অংশ,২চা চামচ নারিকেল তেল,২চা চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এই মিশ্রণটি ২০-২৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। তারপর শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এতে করে চুলের গোড়া শক্ত এবং চুল পড়া বন্ধ হবে। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও,শুধু আমলকির রস ব্যবহার করতে পারেন চুল দ্রুত লম্বা করতে।
চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার
আমলকি,জবা ফুলের পাশাপাশি তুলে মেথি ও ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার চুল পড়া বন্ধ করে। মেথি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। মেথি চুলকে ঘন ও লম্বা করে। এক কথায় বলতে পারেন মেথি চুলের সকল সমস্যা দূর করে। মেথি মাথার ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে।
মেথির হেয়ার প্যাক
প্রথমে ৫০ গ্রাম মেথি ১ কাপ পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে মেথির পানিসহ মেথি দানা ব্লেন্ডারে দিয়ে পেস্ট করে নিন। তারপর মেথির পেস্ট এর মধ্যে ২-৩চা চামচ টক দই একসাথে মিশিয়ে নিন।
এভাবে তৈরি হয়ে যাবে মেথির হেয়ার প্যাক। এরপর ৪০ মিনিটের মত চুলে পেস্ট লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যামপুর সাহায্য ধুয়ে ফেলুন। এটা ব্যবহারে চুলের খুশকি দূর হবে এবং চুল হবে ঝলমলে।
চুলের যত্নে তিসির ব্যবহার
চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে তিসি। মাথার ত্বকে কোন ক্ষত থাকলে সেটি নিরাময় করতে সাহায্য করে। এটি চুল সিল্কি,সোজা,মজবুত এবং লম্বা করতে সাহায্য করে। চুল ফাটা বন্ধ করতেও সাহায্য করে। তিসিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে।
চুলের যত্নে তিসির হেয়ার প্যাক
প্রথমে কিছু তিসি বীজ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর চুলার উপর একটি হাঁড়ি বসিয়ে তাতে তিসিবীজ ও পরিমান মত পানি ঢেলে নিন। তিসি্র পরিমাণ আপনার চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী নিতে পারেন। এরপর চুলাটি অন করে অনবরত নাড়তে থাকুন।
যখন তিসির মিশ্রণটি ঘন এবং আঠালো হয়ে আসবে,তখন চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। তারপর মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে আসলে একটি ছাঁকনির সাহায্যে ছেকে নিতে হবে। ব্যাস,তৈরি হয়ে গেল তিসির হেয়ার প্যাক। আপনি চাইলে মিশ্রণটির সাথে খানিকটা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।
চুলের বৃদ্ধি ও সুস্থতায় মেহেদি
আমরা অনেক সময় চুলের প্রয়োজনীয় উপাদান চুলকে দিতে পারি না। যাতে করে দেখা দেয় চুল পড়া। আর এই চুল পড়া ঠেকাতে মেহেদী ব্যাপক ভূমিকা রাখে। খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। মেহেদি চুলকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে।
মেহেদির হেয়ার প্যাক
মেহেদির হেয়ার প্যাক তৈরি করার জন্য প্রথমে পরিমাণ মতো মেহেদি পাতা সংগ্রহ করতে হবে। এরপর মেহেদি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর মেহেদী পাতা বেটে নিতে হবে। এরপর বাটা মেহেদির সাথে ১টি ডিম,২চা চামচ লেবু রস,২চা চামচ নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
তারপর ৪০ মিনিটের মতো মাথায় রেখে দিতে হবে। এরপর শুকিয়ে গেলে সম্পূর্ণ মাথা ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করতে পারেন ।
আমাদের শেষ কথা
আপনার চুলের কিভাবে যত্ন নিবেন সেই বিষয় সম্পর্কে সমস্ত ঘরোয়া টিপস আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
যদি আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ফলো করতে হবে। আমরা এই ধরনের আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকে। আপনি এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।
comment url