বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
বেল খেতে আমরা প্রায় সবাই পছন্দ করে থাকি। বেল অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দেশী ফল।
এটি দেশের প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায় এর ফলের উপকারিতা প্রচুর বিশেষ করে
বেলের শরবত আমাদের শরীরকে অনেক প্রশান্তি দেয়। বেল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী ফল। বেলের প্রচুর উপকারিতা রয়েছে আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আপনি যদি
অত্যান্ত বেলপ্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
একটি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার আগে আমাদের তার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া
উচিত। তাই বেল খাওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে বেল কতটুকু উপকারী এবং কতটুকু
অপকারী। চলুন, বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক::-
বেল খাওয়ার উপকারিতা
আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গাতেই বেল পাওয়া যায়। বেল খুবই পরিচিত একটি ফল। বেল
খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি। বেলের শরবত তৈরি করেও খাওয়া যায়, আবার এমনিতেও
খাওয়া যায়। তবে শরবত বানিয়ে খেলে একটু বেশি ভালো লাগে। বেলে রয়েছে নানা ধরনের
পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে এবং শরীরকে
সুস্থ রাখে। শরীর সুস্থতায় বেলের বিকল্প হয় না। চলুন,বেল খাওয়ার উপকারিতা
সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:-
বেলে রয়েছে হাজারো পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে অত্যন্ত জরুরী।
বেলে ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিনএ,ভিটামিনবি,ভিটামিনসি।
ক্যালসিয়াম,পটাশিয়া,ফসফরাস,কার্বোহাইড্রেট,প্রোটিন,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি,রিবফ্লোবিন,থায়ামিন,অ্যান্টি-প্রলেফিরেটিভ,অ্যান্টি-মুটাজেনসহ
নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান।
বেলে উপস্থিত পটাশিয়াম যা আমাদের হৃদরোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের
হৃদরোগের সমস্যা দূর করতে বেল দারুন ভূমিকা রাখে। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে
চিন্তিত, এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বেল সহায়তা করে। বেলে রয়েছে
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি,যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ সমস্যা সমাধান করে।
অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদানটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বেল আমাদের কিডনিকে সুস্থ রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেলের ভূমিকা
অপরিসীম। আলসারের মত রোগ প্রতিরোধ করে থাকে বেল। ম্যালেরিয়া রোগের হাত থেকে
রক্ষা করে বেল। নিয়মিত বেল খেলে ক্যান্সার নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমাদের শরীরের রক্তকে পরিস্কার রাখতে বেলের তুলনা হয় না। হজম-শক্তি বৃদ্ধি করতে
বেল দারুন ভূমিকা রাখে।
আমাশয়,ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে বেল কাজ করে থাকে। শরীরের সমস্ত ক্লান্তি
দূর করে শরীরকে প্রশান্তি দান করে বেল। আপনি যদি বেলে শরবত খান তাহলে অনেক শান্তি
লাভ করতে পারেন। বেলে রয়েছে ভিটামিন এ,যা আমাদের চোখের সকল ধরনের সমস্যা দূর
করতে সহায়তা করে। আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে রাখে অত্যন্ত স্বচ্ছ।
বেলে উপস্থিত ক্যালসিয়াম,যা আমাদের হাড় গঠনে ও হাড় মজবুত করতে অত্যন্ত সহায়তা
করে থাকে। বেল ডায়াবেটিস এর মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। তাই যারা ডায়াবেটিস রোগে
আক্রান্ত আছেন,তাদের খাদ্য তালিকায় পাকা বের রাখতে পারেন। বেলে রয়েছে ভিটামিন
সি,যা আমাদের দাঁত কে রক্ষা করে। অনেক সময় আমাদের দাঁত ক্ষয় হয়ে যায় ভিটামিন
সি এর অভাবে।
তাই দাঁতকে রক্ষা করতে ভিটামিন সি পেতে নিয়মিত বেল খেতে পারেন। বেলের শরবত খেলে
আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে শরীর হবে এনার্জেটিক। তাই নিয়মিত বেল খাওয়ার
অভ্যাস করুন। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হয়ে উঠবে।
কাঁচা বেল খাওয়ার উপকারিতা
আমরা সবাই বেশিরভাগই পাকা বেল খেয়ে থাকি। কাঁচা বেল প্রায় কমই খাওয়া হয়। পাকা
বেলের যেমন উপকারিতা রয়েছে,কাঁচা বেলেরও অনেক উপকার রয়েছে। চলুন, কাঁচা বেল
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:-
প্রথমে জেনে নিন কাঁচা বেল কিভাবে খেতে হয়। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কাঁচা
বেলও আবার খাওয়া যায়? হ্যাঁ বন্ধুরা,কাঁচা বেলও খাওয়া যেতে পারে এবং তা থেকে
নানা রোগের উপশমও পাওয়া সম্ভব।কাঁচা বেল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে রোদে শুকিয়ে
তারপর গুড়ো করে নিতে হবে। এই শুকনো গুড়ো পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
এই পানি নিয়মিত খাওয়ায় আমাশয় রোগ ভালো হয়।ম্যালেরিয়া রোগ থেকে রক্ষা করে কাঁচা
বেল। এছাড়াও পেটের সকল রকমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই কাঁচা বেল।গুরু কৃমি
দূর করতে কাঁচা বেল দারুণ ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত কাঁচা বেল খাওয়ার
অভ্যাস,করুন নিজেকে সুস্থ রাখুন।
খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা
এমনি সময় বেল খাওয়ার চাইতে খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা সবচাইতে বেশি। আপনি
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বেল খেলে নানান ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে
পারেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কাঁচা বেলের গুঁড়ো বা বেলের সুট পানির সাথে
মিশিয়ে খেলে আমাশয় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সেই সাথে সকালে খালি পেটে বেল
খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের হাতে রক্ষা পাওয়া যায়।
যারা দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত বেলের শরবত খেতে পারেন।
বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার,এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা আমাদের ত্বককে সতেজ রাখে। আমরা অনেকেই ব্রণ
নিয়ে চিন্তিত। নিয়মিত বেল খেলে এই ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়ার রয়েছে প্রচুর উপকারিতা রয়েছে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী
মহিলারা অনেক সময়ই ক্লান্ত অনুভব করে এই ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস বেলের শরবত
প্রচুর ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যার সৃষ্টি
হতে পারে। এই বেল বা বেলের শরবত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
গর্ভের বাচ্চার বিকাশ ও বৃদ্ধিতে বেল দারুন ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন বেল খেলে
গর্ভবতী মহিলার রক্ত পরিষ্কার থাকবে। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলারা ডায়রিয়া রোগে
আক্রান্ত হয়ে থাকেন এই বেল বা বেলের শরবত ডায়রিয়া রোগ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও
বেল জন্ডিস রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। তাই গর্ভাবস্থায় আপনি বেল খেলে অনেকটাই
আরাম অনুভব করবেন।
বেলের গুড়া খাওয়ার নিয়ম
বেলের গুড়া বলতে সাধারণত বুঝাই কাঁচা বেলকে ছোট ছোট করে কেটে রোধে শুকিয়ে তারপর
যে গুঁড়ো বা পাউডার তৈরি করা হয়। এই বেলের গুঁড়ো শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
বেলের গুঁড়ো প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে এক গ্লাস পানির মধ্যে ২চা চামচ পরিমাণ
মিশিয়ে সাথে পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন।
আমাশয় রোগে বেলের উপকারিতা
আমাশয় রোগ নিরাময় করতে বেল দারুন ভূমিকা রাখে। আমাশয় রোগ ভালো করতে নিয়মিত
সকালে খালি পেটে বেলে গুড়ো পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও পাকা বেল
খেতে পারেন শরবত তৈরি করে। তাতে আপনার আমাশয় রোগ উপশম হবে।
বেল পাতার রস খেলে কি হয়
বেল পাতাতে উপস্থিত আয়রন,পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম যা পেট সংক্রান্ত সকল প্রকার
রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন পেট ব্যথা,পেট জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি। ঘামের
দুর্গন্ধ দূর করতে বেলপাতার রস দারুন ভুমিকা পালন করে। নিয়মিত বেল পাতার রস খেলে
আপনার ঘামের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দারুন ভূমিকা পালন করে। বেল পাতার রস বার্ধক্য
থেকে মুক্তি প্রদান করে। বেল পাতার রস সর্দি কাশির মতো ভালো করে। মধু ও গোলমরিচের
সঙ্গে বেল পাতার রস মিশিয়ে খেলে জন্ডিস রোগ দ্রুত ভালো হয়। পিরিয়ডের সময়
অতিরিক্ত রক্তপাত হলে বেল পাতার রস খাবেন।
কিভাবে খাবেন বেল পাতা
বেলপাতা থেঁতো করে তা থেকে রস বের করে সেই রস খেতে পারেন। আবার সেই রসের মধ্যে
কয়েক ফোঁটা তুলসির রস এবং আদর রস মিশিয়ে একটি পাত্রে ফুটিয়ে নিয়ে সেটি খেতে
পারেন। শরীরকে শীতল রাখতে বেল পাতার রস দারুন ভূমিকা পালন করে। তারুণত্ব বজায়
রাখে এই বেল পাতার রস।
বেল খাওয়ার অপকারিতা
অতিরিক্ত সব খাবার খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই কোন খাবার খাওয়ার আগে
আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে। অতিরিক্ত বেল খাওয়াও আমাদের
স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।যারা প্রথম প্রথম খালি পেটে বেল খাবেন
তাদের বমি বমি ভাব হওয়ার সম্ভাবনা থেকে থাকে।
আমাদের শেষ কথা
বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। আমরা
আপনাদের মাঝে কয়েক ধরনের বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত
আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয়
সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।
যদি আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ফলো করতে
হবে। আমরা এই ধরনের আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকে। আপনি
এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি।
এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।
comment url