যে ৭টি কারণে অ্যালোভেরা ব্যবহার করবেন

আলোভেরা বা ঘৃতকুমারী হলো এক ধরনের ভেষজ ঔষধি গাছ। ঘৃতকুমারী হলো বাংলা শব্দ। ঘৃতকুমারী এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Aloe Vera যা এখন ঘৃতকুমারী নাম থেকে অ্যালোভেরা নামে বেশি প্রচলিত। আমরা সাধারণত অ্যালোভেরা নামেই জানি।

অ্যালোভেরা যেমন ঔষধি গাছ হিসেবে শরীরের ভেতরে অংশের রোগ ব্যাধি নিরাময় করে,তেমনি শরীরের বাইরের ও অনেক সমস্যা দূর করে। যেমন মুখমন্ডল ও চুলের সমস্যা দূর করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক অ্যালোভেরা কিভাবে শরীরের ভেতরে ও বাইরে উপকার করে এবং এর উপকারিতা গুলো কি কি ।

সৌন্দর্য এবং সুস্থতার জন্য অ্যালোভেরা

সুস্থ শরীর কে না চাই,বলুন ? আমরা সবাই চাই একটি সুস্থ শরীর নিয়ে জীবন যাপন করতে। আর এই শরীরকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে অ্যালোভেরার কোন বিকল্প নেই। অ্যালোভেরা হলো একটি ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদ। 

অ্যালোভেরাতে রয়েছে ভিটামিন এ,(বিটা ক্যারোটিন) ভিটামিন ই,ভিটামিন সি,খনিজ ফলিক অ্যাসিড এবং কোলিন সহ কিছু পরিমাণে খনিজ থাকে এবং অল্প পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা মুক্ত রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করে। 

এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মুক্ত রেডিক্যাল কি ? মুক্ত রেডিক্যাল এক ধরনের সক্রিয় অনু। এটা শরীরে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করে। শরীরের কোষ কলা ধ্বংস করতে সাহায্য করে এই মুক্ত অনু। 

এটা শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে এই ক্ষতিকর অনুর সাথে লড়াই করে অ্যালোভেরা। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অ্যালোভেরা অনেক উপকারী।

অ্যালোভেরা জুস তৈরির নিয়ম

অ্যালোভেরা জুস তৈরি করার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে পরিমাণ মতো তোকমা দানা নিতে হবে এবং পরিমাণ মতো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আপনি যে পরিমাণ শরবত তৈরি করবেন সেই পরিমাণ মতো তোকনাদা দানা নিবেন। 

ধরুন এক গ্লাস শরবতের জন্য এক চামচ তোকমা দানা নিলেন। তারপর দানাগুলো এক কাপ পরিমাণ পানির মধ্যে মিশিয়ে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর একটি অ্যালোভেরার ডগার কিছু অংশ কাটা চামচের সাহায্যে ঘোষে এলোভেরার জেলটা বের করে নিতে হবে। 

তারপর জেলটা গ্লাসে নিয়ে ভালোভাবে নেড়ে গলিয়ে নিতে হবে। তারপর এক চামচ লেবুর রস,এক চামচ মধু ও কিছু পরিমাণ লবণ যোগ করে সবগুলো উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার ভালোভাবে মেশানোর পর তৈরি হয়ে যাবে অ্যালোভেরার জুস।

ওজন কমাতে অ্যালোভেরা ব্যবহার

অ্যালোভেরা শরীরের ওজন কমাতে কাজ করে থাকে ম্যাজিকের মত। আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে অ্যালোভেরার রস প্রতিদিন নিয়মিত পান করতে পারেন। 

অ্যালোভেরার রসে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কিছু খনিজ রয়েছে যা আমাদের শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে ।এতে করে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অ্যালোভেরা ব্যবহার

আপনি যদি নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান করেন,তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এটা পান করলে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেকটা শক্তিশালী হয়। 

সর্দি-কাশি এবং ছোট বড় কোন রোগই আপনার আশেপাশে আসতে পারেনা,এর কারণে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

ঘরোয়া উপায়ে রূপচর্চায় এলোভেরা জেল ব্যবহারের নিয়ম

ফর্সা ও দাগ মুক্ত ত্বকের জন্য প্রথমে অ্যালোভেরা থেকে জেল বের করে নিতে হবে। তারপর জেলের সাথে কিছু পরিমাণ কাঁচা দুধ যোগ করতে হবে এবং ভালোভাবে এটিকে মিশিয়ে নিতে হবে।তারপর হাত দিয়ে জেলের প্রলেপ মুখে লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে।

দশ মিনিটের মত ম্যাসাজ করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে শুকানো পর্যন্ত। মুখ শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এটি প্রতিদিন ব্যবহারে আপনার মুখ হয়ে উঠবে উজ্জ্বল,নরম ও মসৃণ। এই প্যাক ব্যবহার করে বয়সের ছাপ দূর করতে পারবেন এবং ত্বকের কুঁচকানো ভাব দূর করতে পারবেন। 

এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারবেন। এভাবেই আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব ।

ত্বকে অ্যালোভেরার উপকারিতা

নরম,কোমল,ফর্সা,দাগহীন সুন্দর ত্বক আমরা সবাই চাই। আর এই সব ত্বকের জন্য রয়েছে অ্যালোভেরা দিয়ে তৈরি দারুন সব উপায়। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণের জন্য অ্যালোভেরা খুবই উপকারী।অ্যালোভেরা জেল ত্বকে পুষ্টি এবং হাইড্রেটেড করে। 

ত্বকের পোড়া দাগ এবং ক্ষত দূর করতে সাহায্য করে। ত্বকের সংক্রমণ নিরাময়ে এটি ভূমিকা রাখে। পিম্পল বা ব্রণ দূরীকরণে অ্যালোভেরা অনেক উপকারিতা রয়েছে। ত্বকে অতিরিক্ত তেল থাকার কারণে ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। ব্রণের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে দিনে দুইবার অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে। 

এটি ব্যবহারের ব্রণ ধীরে ধীরে ভালো হতে থাকবে। এটি ব্যবহারে মেছতা এবং মুখের কালো দাগ দূর করণে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা ব্যবহার করে উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী হন।

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা হেয়ার প্যাক তৈরি এবং ব্যবহারের নিয়ম

সুন্দর,ঝলমলে,মসৃণ চুল পাওয়া সম্ভব অ্যালোভেরা ব্যবহারের মাধ্যমে। আমরা সহজেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে অ্যালোভেরা দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারি। অ্যালোভেরার হেয়ার প্যাক তৈরি করতে প্রথমে একটি বাটিতে অ্যালোভেরা জেল,২ চামচ লেবুর রস,৩ চামচ টক দই একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
তারপর চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সমানভাবে লাগাতে হবে। এভাবে ৪০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর ভালোভাবে শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে নিতে হবে। চুল শুকানোর পর আপনি নিজেই এর ফলাফল দেখতে পাবেন। আপনি সপ্তাহে এক থেকে দুইবার এই হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। যার ফলে পেতে পারেন সুন্দর,মসৃণ চুল ।

খালি পেটে অ্যালোভেরা খেলে কি হয়

খালি পেটে অ্যালোভেরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনি যদি এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা এবং পরিমাণ মতো তকমা মিশিয়ে পান করেন তাহলে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা সিরাম তৈরি এবং ব্যবহার

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা জেলের কোন বিকল্প নেই। এটি কিভাবে চোখের নিচে ব্যবহার করতে হবে তার নিয়ম জেনে নিন। প্রথমে অ্যালোভেরা জেল এর সাথে ১ চামচ আলুর রস,২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। 
ভালোভাবে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে একটি সিরাম। তারপর সামান্য পরিমাণে তুলো নিন। সিরামটি তুলোর সাথে মেখে নিয়ে হালকা হাতে চোখের নীচে ম্যাসাজ করে নিন ২-৩ মিনিট। এরপর ম্যাসাজ করা হয়ে গেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। 

তারপর ধুয়ে ফেলুন,যাদের চোখের নিচে কালো দাগ বেশি তারা প্রতিদিন রাতে ব্যবহার করতে পারেন। আর যাদের কম তারা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন ।

আমাদের শেষ কথা

অ্যালোভেরা কি,এটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং এর উপকারিতা কি সেসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

যদি আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ফলো করতে হবে। আমরা এই ধরনের আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকে। আপনি এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।

comment url