সফেদা ফলের ১৪টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

সফেদা খুবই রসালো মিষ্টি ও সুস্বাদু একটি ফল।সফেদাকে বলা হয় জান্নাতি ফল।সফেদা ফলে প্রচুর পুষ্টিগুণ বিদ্যমান। ছোট থেকে বড় প্রায় সবাই সফেদা ফল পছন্দ করেন। এই সফেদা ফলের রয়েছে বহুগুণ উপকারিতা পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে।
আপনি যদি একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং নিয়মিত ফল খেয়ে থাকেন, তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। চলুন,সফেদা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক

সফেদা ফল খাওয়ার উপকারিতা

রসে টইটুম্বুর সফেদা ফল। যা খেতে খুবই রসালো,মিষ্টি ও সুগন্ধযুক্ত। সফেদা ফলে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীর স্বাস্থ্য কে নানা ভাবে নানান রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। সফেদা ফলে রয়েছে শর্করা,আমিষ,ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম ,সোডিয়াম, আয়রন,জিংক সহ নানা পুষ্টির উৎস।

এছাড়াও ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ,ভিটামিন সি,ভিটামিন ই,ফলেট। এছাড়া রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইবার। সফেদাতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সফেদাতে থাকা ভিটামিন এ আমাদের রাতকানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। 

সফেদা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ যা আমাদের দেহে শক্তির যোগান দেয়। সফেদা ফলে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ও লৌহ আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও দাঁতের সকল সমস্যা দূর করে দাঁতকে সুস্থ সবল রাখে। মানসিক চাপ দূর করতে সফেদা দারুন কাজ করে। 

এছাড়াও বিষন্নতা,ঘুমের অভাব রোধ করতে ভূমিকা রাখে সফেদা ফল। সফেদাতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ব্যাপক উপকার করে। সফেদা ওজন কমাতে সাহায্য করে। চোখের সকল সমস্যা দূর করে চোখকে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ রাখে। 

নিয়মিত সফেদা ফল খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। সফেদা সর্দি-কাশি উপশম করে। সফেদা ডায়রিয়া রোগ নির্মূল করতে সহায়তা করে। নিয়মিত সফেদা ফল খাওয়াই ফুসফুস ভালো থাকে ও নানান ধরনের ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করে। সফেদা ফল নিয়মিত খেলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে। 

ত্বকের সমস্ত বলিরেখা দূর করে ত্বককে রাখে সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জল। এই ফল বয়সের ছাপ দূর করতে দারুন ভূমিকা রাখে। সফেদার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ফল দেখতে আকারে ছোট হলেও এর কার্যকারিতাগুলো বিশাল বিশাল। সফেদা ফল নতুন কোষ তৈরিতে অবদান রাখে।

গর্ভাবস্থায় সফেদা খাওয়ার উপকারিতা

মিষ্টি, রসালো ও সুগন্ধ সমৃদ্ধ ফল হচ্ছে সফেদা। গর্ভবতী মহিলারাও সফেদা ফল নিয়মিত খেতে পারেন। সফেদাতে থাকা পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মা ও গর্ভের বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী। চলুন, গর্ভাবস্থায় সফেদা ফল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:-

সফেদা ফলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান গর্ভবতী মহিলার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গর্ভবতী মহিলার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করে। পেটব্যথা, পেটে জ্বালাপোড়া উপশম করে সফেদা ফল। সফেদা ফলে উপস্থিত ক্যালসিয়াম,আয়রন,লৌহ,গর্ভবতী মহিলা ও গর্ভের বাচ্চার হাড় গঠন ও মজবুত করতে সহায়তা করে। 

গর্ভবতী মহিলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সেই সাথে শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে শক্তিশালী করে তোলে। গর্ভবতী মহিলার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের দারুণ ভূমিকা পালন করে সফেদা ফল। গর্ভাবস্থায় থাকা সমস্ত ক্লান্তি দূর করে এই সফেদা ফল।

সফেদা ফল খাওয়ার সঠিক সময়

শুধু সফেদা ফলই না সব ধরনের ফলই যদি আপনি সকালে খালি পেটে খান তাহলে সব চাইতে বেশি উপকার পাবেন। কেননা ফল তাড়াতাড়ি হজম হয়।
যার কারণে ফলের সকল পুষ্টিগুণ গুলো খুব সহজে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,খালি পেটে ফল ও ভরা পেটে জল খেতে। তাই সকালে ফল খেলে আপনি বেশি উপকারিত হবে।

সফেদা পাতার উপকারিতা

ফলের পাশাপাশি সফেতা পাতারও কিছু উপকারিতা রয়েছে। আমাদের শরীরে অনেক সময় কেটে-ফেটে যায়। সেই ক্ষতস্থানে যদি সফেদা ফলের পাতা ছেচে লাগাতে পারেন,তাহলে আপনার ক্ষতস্থানের রক্ত পড়া বন্ধ হবে। এই ফলের পাতার রস রক্ত পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে।

সফেদা ফল পাকানোর নিয়ম

বাজার থেকে কিনে আনা পাকা সব ধরনের ফলই প্রায় কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো হয়।আর সেই কেমিক্যাল যুক্ত ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই বিপদজনক। আমাদের শরীরকে ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত ফল। আর এ স্বাস্থ্যসম্মত ফল বাড়িতে বসেই পাকানো সম্ভব।যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার করবে। চলুন,জেনে নেয়া যাক কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফল পাকানো যায়:-

পদ্ধতি ১

প্রথমে আপনাকে গাছ থেকে কিছু সফেদা ফল পেড়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন সফেদাগুলো যেন মাটিতে পড়ে ফেটে না যায়। সেজন্য আপনি হাত দিয়ে পেড়ে নিতে পারেন। তারপর খেয়াল করে দেখবেন,সফেদা ফলের নিচের অংশে কিছুটা কাটার মত অংশ থাকে।

সেই কাঁটাগুলো যদি বড় আকারের হয় তাহলে বুঝবেন, সেই ফল খাওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়েছে। আর যদি দেখেন সেই কাটা যুক্ত অংশটা এখনো বেরই হয়নি বা একদম ছোট তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে, সেগুলো খাওয়ার উপযুক্ত এখনো হয়ে ওঠেনি। আরো কিছুদিন গাছে রেখে দিতে হবে। এখন কথা হচ্ছে ফলগুলো পাকাবেন কিভাবে ? 

ফল গুলো পাকানোর জন্য প্রথমে ফলগুলো একটি পলিথিনের মধ্যে বেঁধে নিন। তারপর বাড়িতে থাকা চালের ড্রামের মধ্যে ঢাকনা দিয়ে রেখে দিন। ২৪ ঘন্টা পর ঢাকনা খুলে দেখবেন আপনার সফেদা ফল গুলো পেকে গেছে। 

তারপর আপনি এটি নিঃসন্দেহে খেতে পারেন। একদম কেমিকাল মুক্ত ফল যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হয়ে উঠবে। আপনি চাইলে আরো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন সফেদা ফল পাকানোর জন্য। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কি সেই পদ্ধতি

পদ্ধতি ২

প্রথমে আপনাকে একটি মাঝারি সাইজের প্লাস্টিকের বাটি নিতে হবে। বাটির মধ্যে একটি বড় কাগজ নিন। আপনি চাইলে খবরের কাগজ ব্যবহার করতে পারেন। কেননা খবরের কাগজ আকারে অনেকটা বড় হয়। তারপর পরিমান মত সফেদা ফল কাগজে মুড়ে বা পেচিয়ে আপনি প্লাস্টিকের বাটির মধ্যে ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে রেখে দিন। 

অবশ্যই আপনাকে বাটিটি গরম জায়গায় রাখতে হবে। সেজন্য আপনি রান্নাঘর ব্যবহার করতে পারেন। কেননা রান্না ঘরে স্বভাবতই একটু গরম থাকে। এভাবে একদিন রান্নাঘরে রেখে দিন, দেখবেন আপনার সফেদা ফল পেকে গেছে।

সফেদা ফল খেলে কি ওজন বাড়ে

ওজন কমাতে আমরা কম বেশি সবাই ফল খেয়ে থাকি। পেঁপে,কলা, আপেল, আনারস, আঙ্গুর,কমলা, সহ আরো নানান ধরনের ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে।
তার মধ্যে সফেদা ফলও অন্যতম। সফেদা ফল নিয়মিত খেলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যায়। যাতে করে আপনার ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। নিয়মিত সফেদা ফল খান,আপনার শরীরের ওজন কমান।

সফেদা ফলের স্বাদ কেমন

সফেদা ফল খুবই রসালো ও মিষ্টি স্বাদের একটি ফল। এটি খুবই সুগন্ধ যুক্ত ফল। সফেদা ফল দেখতে কিছুটা আলুর মতো হয়ে থাকে। কিন্তু আলুর গা যেমন মসৃণ, সফেদা ফলের গাছ তেমন মসৃণ নয়। একটু খসখসে টাইপের। এই ফলের গায়ের রং দেখতে কিছুটা দো-আঁশ মাটির রঙের মতো।

সফেদা ফল খাওয়ার অপকারিতা

সব ধরনের খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও বিরাজ করে। তেমনি সফেদা ফলেরও কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন,সেই অপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক:-

যারা কখনো সফেদা ফল খাননি প্রথমবারের মতো খাচ্ছেন তাদের এই ফল খেলে বমি বমি ভাব সৃষ্টি হতে পারে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের সফেদা ফল খেলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। সফেদাতে গ্লুকোজের মাত্রা একটু বেশি,তাই যারা ডায়াবেটিসের রোগী আছেন তাদের সফেদা ফল খেলে ডায়াবেটিস এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সফেদা ফলে কিছুটা সাদা তরল পদার্থ রয়েছে। যা গায়ে পড়লে ফোসকা বা চুলকানি হতে পারে। সেজন্য খাবার সময় সতর্কতা অবলম্বন করে খাবেন।

আমাদের শেষ কথা

সফেদা ফলের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত। আমরা আপনাদের মাঝে সফেদা ফল খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আমাদের সাথে এতক্ষণ থাকার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

যদি আপনি এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত আমাদের ফলো করতে হবে। আমরা এই ধরনের আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে থাকে। আপনি এবং আপনার পরিবারের সকলের জন্য সুস্থতা কামনা করে এখানেই শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এন বি ট্রিক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট এর রিভিউ করা হয়।

comment url